প্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন টিন সার্টিফিকেট কি? বা টেন সার্টিফিকেট এর সুবিধা গুলো। টিন সার্টিফিকেট হলো একটি প্রমাণপত্র বা আইডেন্টিফাই নাম্বার যা একজন তরুণ বা টিনেজার ব্যক্তির শিক্ষামূলক সাফল্যের জন্য প্রদান করা হয়। এটি সাধারণভাবে উচ্চশিক্ষা বা ক্যারিয়ার পথে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এটি মূলত করদাতার পরিচয় পত্র হিসেবেও পরিচিত।
চলুন তাহলে জানাজাক টিন সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্ত কিছু। কিভাবে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করবেন। টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে কি কি লাগে? টিন সার্টিফিকেট কখন করা উচিত এবং টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে কত টাকা লাগে?
টিন সার্টিফিকেট কখন করা উচিত
টিন সার্টিফিকেট মূলত ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার আগে তৈরি করতে হবে। কারণ ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেটের নাম্বার প্রয়োজন হবে। এটি কর দাতার পরিচয় বহনকারী সার্টিফিকেট। আপনি যদি বছরে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার উপরে ইনকাম করেন তাহলে আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া লাগবে।
টিন সার্টিফিকেট তৈরি করা তেমন কঠিন কিছু নয়। আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইনে টেন সার্টিফিকেট বের করতে পারেন কিংবা এটি ঝামেলা মনে হলে কোন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে টেন সার্টিফিকেট বের করে নিতে পারেন। টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন হয় তা হলোঃ
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র\ এন আই ডি কার্ড
একটি সজল ফোন নাম্বার
তবে আপনি যদি কোন কোম্পানির হয়ে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে চান এর জন্য আপনাকে কোম্পানির আরজেএসসি নাম্বার প্রয়োজন হবে।
টিন সার্টিফিকেট থাকলে কত টাকার ট্যাক্স দিতে হয়?
টিন সার্টিফিকেট এর জন্য নূন্যতম 5000 টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে 4000 টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। এছাড়াও জায়গা ভেদে বা কাজ ভেদে এই ট্যাক্সের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সারদের কোন ইনকাম ট্যাক্স লাগবে না।
টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
সাধারণভাবে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্বের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি সিম্পল একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্টে তৈরি করার জন্য
User ID তে আপনার নামের সাথে মনে থাকবে এমন কিছু অক্ষর দিন এবং তাতে কোন স্পেস দেওয়া যাবে না। এরপর ৮ অক্ষরের একটি হাড পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এরপরও সেখানে কিছু প্রশ্ন দেওয়া থাকবে সেই প্রশ্নের ভেতর থেকে একটি প্রশ্ন সিলেক্ট করতে হবে।
এবং সেই প্রশ্নের আপনার সাথে মিল রেখে একটি উত্তর দিতে হবে যেন সেটি অন্য কেউ না জানে। তারপর একটি ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। এরপর একটি গ্রাফিক্যাল কোড ক্যাপচার বসিয়ে রেজিস্ট্রেশন এ ক্লিক করলেই অ্যাকাউন্ট কমপ্লিট।
দ্বিতীয় ধাপ
এবার শুরু হবে টিম সার্টিফিকেট রেজিস্টেশন করার মূল কার্যক্রম। এবার ওই ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে যেটি কিছুক্ষণ আগে তৈরি করা হয়েছে। লগইন করার পর সাইডের মেনু অপশন থেকে টেন অ্যাপ্লিকেশন এ ক্লিক করে যেতে হবে। যেখানে একটি ফরম দেওয়া হবে সেটি পূরণ করতে হবে।
ফরম পূরণের জন্য প্রথমে ন্যাশনালিটি সিলেক্ট করতে হবে এবং এনআইডি কার্ড আছে না নাই সিটি সিলেক্ট করতে হবে। তবে ১৮ বছর বয়সের ওপর যদি কেউ সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করে তাকে অবশ্যই এনআইডি কার্ড নাম্বার প্রদান করতে হবে। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনার পরবর্তী আয়ের অপশন সিলেক্ট করতে হবে। যেখানে তিনটি অপশন থাকবে সেগুলো হলোঃ
সার্ভিস – যদি আপনি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন।
প্রোফেশন – যদি আপনি ডাক্তার, প্রকৌশলী, চার্টার্ড হয়ে থাকেন।
বিজনেস – যেকোনো ধরনের ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন।
এবার আপনি আপনার লোকেশন সিলেক্ট করে চলে যান পরের ধাপে। এখানে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে। যেগুলো আপনার পরিচয় পত্র কিংবা এনআইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে তথ্যগুলো দিতে হবে এবং অবশ্যই ইংরেজি অক্ষরে দিতে হবে। সেগুলো হলোঃ
টিন সার্টিফিকেট এর আবেদনকারীর নাম, আবেদনকারীর নাম, আবেদনকারীর লিঙ্গ, NID কার্ডের নাম্বার, জন্ম তারিখ, মাতা – পিতার নাম, স্বামী / স্ত্রীর নাম ( যদি থাকে ), মোবাইল নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, এরপর সবশেষে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে বা নেক্সট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন এর এটি শেষ ধাপ। এর জন্য পূরণকৃত ফরমটি আপনাকে পুনরায় রিভিউ এর জন্য দেওয়া হবে। সেখানে যদি কোন ভুল তাহলে সেটি ঠিক করে সেভ সার্টিফিকেট এই অপশনে ক্লিক করে কিছুক্ষনের মধ্যে সেখানে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোডের অপশন পাওয়া যাবে। এটি মূলত আপনার ট্রেন সার্টিফিকেট। এটি আপনি যে কোন প্রিন্ট করে যেকোন কম্পিউটারের দোকান থেকে বের করে নিতে পারবেন।
এবার জানবো তিন সার্টিফিকেট থাকলে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা হয়। হ্যাঁ আপনার যদি টিন সার্টিফিকেট থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে এই টিন সার্টিফিকেট দিয়ে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা হয় সেগুলো।
সুবিধা গুলো
টিআইএন নম্বর গ্রহণের মাধ্যমে আপনি একজন বাংলাদেশের গর্বিত করদাতা হিসেবে উল্লেখ হবেন।
ব্যাংকে একগুচ্ছ টাকা রাখলে সেখান থেকে ১৫ শতাংশ করকাটা হয়। তবে আপনি যদি সেখানে তিন সার্টিফিকেট দিতে পারেন তবে সেখানে থেকে ১০% করে খড় কাটা হবে। এতে আপনার পাঁচ শতাংশ কর বেঁচে যাবে।
তাছাড়াও আপনি যদি ব্যাংক ঋণ নিন বা নেওয়ার চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রেও আপনাকে টিন সার্টিফিকেট থাকা লাগবে।
যেকোনো ছাত্র ছাত্রীর টিন সার্টিফিকেট থাকলে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
যেকোনো ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ লক্ষ কিংবা তার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র নিলে সঞ্জয় পত্রকারীকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট দিতে হবে কিংবা থাকতে হবে।
যে কোন বড় ধরনের ব্যবসার জন্য আপনার টিম সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার যদি টিন সার্টিফিকেট না থাকে তবে ব্যবসাটি অবৈধ বলে ঘোষণা হবে।
অসুবিধা গুলো
টিন সার্টিফিকেট থাকার যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধা আছে। যে কোন জিনিসের যেমন সুবিধা আছে তেমনই অসুবিধা আছে। আপনি যদি তিন সার্টিফিকেট নিবন্ধন কারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রতিবছর ট্যাক্স দিতে বাধ্য।
আপনি যদি নিয়মিত প্রদান না করেন তাহলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন অথবা আপনি যদি একসাথে তিন বছরের কোন কর না প্রদান করেন তাহলে আপনার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আপনার উপার্জনকৃত টাকাগুলো কালো টাকা বলে গণ্য হবে। তাই আপনি যদি একজন টিন সার্টিফিকেট নিবন্ধনকারী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কর পরিশধ করুন।
আপনি যদি একজন টিন সার্টিফিকেট নিবন্ধন কারী হয়ে থাকেন এবং নিয়মিত কর পরিষদ করে থাকেন, তাহলে আপনি একজন দেশের গর্বিত করদাতা হিসেবে গণ্য হবেন। আর আপনি যদি নিয়মিত কর পরিষদ না করে থাকেন তাহলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আশা করছি টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কের বিষয়গুলো সহজভাবে জানতে পেরেছেন।
আপনার যদি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও তিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখে। এতে তাদেরও বিষয়গুলো বুঝতে সহজ হবে।
0 coment rios: